কাইয়ুম ইসলাম সোহেল,
তরুণদের ৮ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে

কাইয়ুম ইসলাম সোহেল আরএসপিএল গ্রুপের এইচআর ম্যানেজার। এর আগে কাজ করেছেন দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিক্রুটমেন্ট প্রধান হিসেবে। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার ও সফলতা নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সমসাময়িক বিষয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বেনজির আবরার—
আপনার ছোটবেলা ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই—
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: ছোটবেলা কেটেছে সবুজের রাজধানী সিলেট-শ্রীমঙ্গলের জেরীন চা বাগানে। রাইফেলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ, ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইবিএ থেকে এইচআরএমসি, আয়ারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচআরএম এবং ওয়ার্কপ্লেস সেফটির উপর ডিপ্লোমা শেষ করেছি। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবিতে পড়াশোনা করছি।
এইচআর পেশায় কেন এলেন?
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: শুরুতে এ পেশায় এসেছিলাম শখ করে। মানুষের সাথে মিশবো, ট্রেনিং করাবো, মানুষের স্যালারি দেবো, নিয়োগ করবো এসব ভেবে। কিন্তু তারপর এ পেশার ভালোবাসায় জড়িয়ে গিয়েছি। কারণ এ ডিপার্টমেন্ট থেকে কোম্পানিকে ভেতর থেকে জানা যায়, বিজনেস ডেভেলপমেন্টের অংশীদার হওয়া যায়, ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতার মানুষকে জানা যায়, হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের পার্ট হওয়া যায়, মানুষের ভালোবাসা এবং দোয়া মন থেকে পাওয়া যায়।
জীবনে যা হতে চেয়েছিলেন—
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: ভালো মানুষ এবং সুখী মানুষ হতে চেয়েছিলাম।
কোভিড-১৯ যে বার্তা দিয়ে গেল—
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: কোভিড মানুষের জীবনের জন্য বাধা হয়ে যেমন এসেছে, পৃথিবীকে ভিন্নভাবে একটি বার্তা যেমন দিয়েছে; তেমনি বিজনেসের নতুন কিছু দিগন্তের সুচনাও করে দিয়েছে। কোম্পানিকে কিভাবে সাডেন সিচুয়েশনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, তার শিক্ষা যেমন দিয়েছে; তেমনি টেক সাপোর্ট নিয়ে কোম্পানির খরচ কমিয়ে বিভিন্ন মিটিং, ট্রেনিং, আলোচনা এবং ঘরে বসে কাজের দিগন্ত দেখিয়েছে। তা কেবল এইচআর নয়, সব সেক্টরে কাজ করার জন্য যারা নিজেকে তৈরি করছেন; তাদের সবাইকে ভাবার রাস্তা দেখিয়েছে। এইচআরের জন্য আমি বলবো, এখন পুরো সময় হয়েছে বিজনেসের ভেতরে প্রবেশ করে তাকে টেনে তুলে নিয়ে আসার। এর জন্য যারা এই জগতে আসার কথা ভাবছেন বা তৈরি হচ্ছেন, সবার প্রতি পরামর্শ থাকবে- মানুষ এবং ব্যবসাকে বুঝে এ জগতে আসুন বা আসার প্রস্তুতি সেরে ফেলুন।
সামাজিক যেসব সংগঠনের সাথে যুক্ত আপনি—
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: বাংলাদেশ এফএমসিজি এইচআর সোসাইটির সাথে জড়িত আছি ফাউন্ডিং মেম্বার হিসেবে। আর যাদের সাথে ছিলাম, ভালোবাসায় কাজ করেছি এবং শিখেছি; সে সংগঠনগুলো হচ্ছে- রোটারি, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, বন্ধুসভা, মৃত্তিকা আবৃত্তি সংগঠন।
তরুণরা কী কী দক্ষতা অর্জন করলে ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে?
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: অনেক বেশি টেক ওরিয়েন্টেড হতে হবে। বিশেষ করে এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট-এগুলো ভালো জানতে হবে। জানার কোনো শেষ নেই। সুতরাং জানতে হবে অনেক কিছু। পাশাপাশি ইমোশনালি অনেক ইন্টেলিজেন্ট হতে হবে। সিচুয়েশনাল লিডারশিপ কোয়ালিটির অনেক ভালো চর্চা করতে হবে। ইন্টার পার্সোনাল কমিউনিকেশনের উপর আরও জোর দিতে হবে। ক্রিটিকাল সিচুয়েশন কিভাবে নিজের অনুকূলে রাখতে হয় এবং ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ—
কাইয়ুম ইসলাম সোহেল: নিজের মাঝে ডুব দিয়ে নিজেকে জানুন। নিজের এসডব্লিউওটি অ্যানালাইসিস করুন। উইকনেসকে কিভাবে সক্ষমতায় রূপান্তর করবেন, তা নিয়ে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। যে পেশায় নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করছেন; সে পেশার ভালো কোনো সিনিয়রকে মেন্টর ঠিক করে নিন। প্রতিদিনের ৮৬,৪০০ সেকেন্ডকে সঠিক ব্যবহার করায় একবিন্দু কৃপণতাও করা যাবে না। কারণ ৮৬,৪০০ সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের ফেরত কেউ কখনো করাতে পারবে না। নিজেকে ভালোবাসুন। সমাজ ও দেশকে ভালো বাসুন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ঘুরে দাঁড়াবে নতুন বাংলাদেশ। পজিটিভ স্বপ্ন দেখতে কার্পণ্য করবেন না। মনে রাখবেন, মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়।