Ayon/Russell,
অফিসে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও আচরণ

কর্পোরেট অফিসে যারা চাকরি করছেন অথবা করবেন তাদের কিছু নিয়ম সম্পর্কে ভাল ধারণা তৈরি করা উচিৎ। ক্যারিয়ার গড়তে বা জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে অফিসের নিয়ম মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। লিখিত ও অলিখিত কিছু কর্পোরেট নিয়ম মেনে চলা ক্যারিয়ারে সাফল্যের পূর্বশর্ত। নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলার জন্য পার্সোনাল হাইজিনের দিকেও যথেষ্ট নজর রাখতে হবে। প্রাথমিকভাবে যে ব্যাপার গুলো মাথায় রাখবেনঃ
# অফিসের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করুন। এই নিয়মটি কোন লিখিত নিয়ম না হলেও যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এমনকি অফিসের বাথরুম কিংবা কিচেনে। আপনি নিজে ব্যবহার করার সময় যেটুকু ময়লা করছেন, অন্তত সেটুকু নিজেই পরিষ্কার করুন। আপনি নিজে ঢুকে বাথরুম যেমন দেখতে চান, চেষ্টা করবেন আপনি বাথরুম থেকে বের হলে যেন অন্য কেউ এসে তেমনই পান। পরিষ্কার থাকা আসলে ভদ্রতার পরিচায়ক।
# অনেক অফিসেই ড্রেস কোড থাকে। তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ অফিসেই নেই। ড্রেস কোড থাকুক বা না থাকুক, পোশাক আশাকে শালীনতা রক্ষা করতে হবে। আপনি যাই পরুন না কেন, সেটা অবশ্যই শালীন ও মার্জিত হতে হবে, যেন অন্যের চোখে কুরুচিপূর্ণ না মনে হয়।
# নিজের শরীরের দুর্গন্ধ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। শরীরে দুর্গন্ধ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রায় সকল সুস্থ মানুষের শরীরে ঘামের কারণে দুর্গন্ধ হয়। কিন্তু সঠিক উপায়ে নিয়মিত গোসল করলে ও প্রসাধনী ব্যবহার করলে এই গন্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খেয়াল রাখবেন আপনার গায়ের দুর্গন্ধে যেন কারো সমস্যা না হয়। আবার অনেকের অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহারের অভ্যাস আছে। এতেও অফিসের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে।
# লিফট ব্যবহারের সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। লিফটে কখনই অতিরিক্ত আরোহী হিসেবে উঠবেন না। লিফট থেকে আগে ভেতরের আরোহীকে নামতে দিন। আপনি যদি দরজার সামনে দাঁড়ান তাহলে ভেতরের আরোহীদের নেমে যাওয়ার জন্য জায়গা দিন। লিফটের ভেতরে উচ্চস্বরে কথা বলা, হাসিতামাশা ও ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
# লাঞ্চ টাইমের বাইরে অফিসে সবার সামনে এটা-ওটা খাওয়া, অফিসে বসে ধূমপান ইত্যাদি মোটেও শোভনীয় নয়। যদি কিছু খেতেই হয় তাহলে আশেপাশের সবার সাথে শেয়ার করুন।
# আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন ধূমপানের পরে মুখের দুর্গন্ধের ব্যাপারে সতর্ক হন। ধূমপানের পরে অফিসে ঢুকলে অবশ্যই বাথরুমে গিয়ে কুলকুচি করুন এবং সম্ভব হলে মাউথ ফ্রেসনার ব্যবহার করুন।
# অনেকের অফিসে বসে নাক কান খোঁচানোর অভ্যাস থাকে যা খুবই বিব্রতকর হতে পারে। নাক কান খোঁচানোর প্রয়োজন হলে বাথরুমে গিয়ে সেরে আসুন।
# সব সময় নিজের কাজের ডেস্ক অথবা কাজের স্থান গুছিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন আপনার ডেস্ক আপনার পরিচয় বহন করে। আবার গোছানো থাকলে নিজেরও কাজ করতে সুবিধা হয়।
# অনেকেই কাজের ফাঁকে জুতো খুলে ফেলেন। একটু আরাম করে বসেন। জুতা খোলার আগে ভাল ভাবে খেয়াল করুন আপনার পা থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে কিনা। অফিসে গেস্ট থাকলে জুতা না খোলার চেষ্টা করুন।
# অনেকের সময়-অসময়ে চুইংগাম চাবানোর অভ্যাস আছে। তবে আপনি যদি কর্পোরেট অফিসের কর্মকর্তা হন তবে এই ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা উচিৎ। অফিসের মিটিং বা অন্য কোন এফেয়ারে চুইংগাম চাবানো আশোভনীয়। এই স্বভাব বাদ দেয়াই ভালো।
# হাঁচি কাশি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। এটা আটকে রাখার কোন উপায় নেই। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে সেটা বাথরুমে গিয়ে সেরে আসতে পারলে ভাল। তা সম্ভব না হলে সবার সামনে থেকে সরে গিয়ে হাঁচি কাশি দেয়ার চেষ্টা করুন। সেটাও যদি সম্ভব না হয় তবে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে হাঁচি কাশি দিন। এমনকি সেটাও যদি সম্ভব না হয় তবে রুমাল বা টিস্যু দিয়ে আটকে হাঁচি কাশি দিন। কারো মুখের উপর হাঁচি কাশি দিলে সেটা যেমন অস্বাস্থ্যকর তেমনি বিব্রতকর।
# সহকর্মীদের সম্মান করতে হবে। সবাই ঊর্ধ্বতনদের সম্মান করে অভ্যস্ত কিন্তু সহকর্মীদের অনেকেই প্রাপ্য সম্মান দিতে চান না। তাদেরকে প্রতিযোগী ভাবেন। ব্যাপারটা মোটেও ঠিক না। সহকর্মী বয়সে যতই ছোট হোক, সকলকে সম্মান করা উচিৎ। সকলের সাথে মিলেমিশে চলুন। ভুল করেও এমন কথা বলবেন না বা কাজ করবেন না যাতে অন্য কেউ কষ্ট পায়।
# যদি খুব বেশি অসুস্থ থাকেন তাহলে অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। কারন আপনার অসুস্থতা অফিসের অন্যদের কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
# যদি অফিসে কোনো কারনে আসতে দেরি হয় তাহলে আগেই এডমিন বা রিপোর্টিং বসকে অবগত করুন।
# সব সময় বিরক্তি প্রকাশ হতে বিরত থাকুন। অফিসটা সবার, এখানে সকলেই কাজ করতে আসেন। তাই শুধু আপনিই কাজ করছেন এবং অন্যের কথা/কাজে আপনি বিরক্ত হচ্ছেন, এমন ভাব প্রকাশ হতে বিরত থাকুন।
# নিজের ব্যক্তিগত বিষয় অফিসে না আনা আরও বড় একটি অলিখিত নিয়ম। অফিসে থাকাকালীন ফোনে কথা বলা, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করা ইত্যাদি। ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পছন্দ-অপছন্দ বাড়িতেই থাক।
# অফিসে চিৎকার করা বা জোরে ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এতে করে অন্যদের কাজের সমস্যা হয়।
# বসের সাথে কখনোই তর্ক করা উচিৎ নয়। বসরা অনেক সময় হয়তো আপনাকে অন্যের ভুলের কারণে বকাঝকা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার উচিৎ তার সাথে তর্কে না জড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝানো। যদি তৎক্ষণাৎ তিনি বুঝতে না চান তবে একটু অপেক্ষা করুন। তার মাথা ঠাণ্ডা হলে অন্য সময় গিয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলুন।
# বসদেরও তার অধীনস্তদের কোন বিষয়ে শাসন করার সময় কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিৎ। কখনই পুরো অফিসের সামনে কাউকে উচ্চস্বরে বকাঝকা করা উচিৎ না। এতে করে একে অপরের উপর শ্রদ্ধা নষ্ট হয়। কোন অপরাধ থাকলে তাকে মিটিং বা কনফারেন্স রুমে ডেকে নিয়ে বুঝিয়ে বলুন। অধীনস্তদের শাসন করার সময় কখনই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপার টেনে আনা ঠিক না।
# অফিসে সহকর্মীদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক হন। আপনার জুনিয়র বলেই যে কাউকে তুমি তুমি করে বলা শুরু করবেন না। শুধু পদবীর জোরেই আপনি যে কাউকে তুমি বলতে পারেন না। সে হয়তো বয়সে, শিক্ষায় বা অভিজ্ঞতায় আপনার সিনিয়র হতে পারে। খুব বেশি জুনিয়র বা বিশেষ আন্তরিকতা ছাড়া কাউকে তুমি বলতে যাবেন না। আর তুই বলার তো প্রশ্নই আসে না। কারো সাথে পূর্বের আন্তরিকতা থাকলেও অফিসে সবার সামনে তুই বলাটা এড়ানোর চেষ্টা করুন।
# অনেকের অভ্যাস আছে কথা বলা শুরু করলে আর অন্য কাউকে সুযোগ দিতে চান না। অফিসের মিটিংয়ে অন্যদের কথা বলতে দিন, তাদের কথা শুনুন, তারপর আপনি কথা বলুন।
# অনেকে মোবাইলে সিনেমার গান বা উদ্ভট রকমের কর্কশ রিংটোন ব্যবহার করেন যা অফিসের পরিবেশ নষ্ট করে। অফিসে নিজের মোবাইল ফোন, ট্যাব ইত্যাদি সাইলেন্ট রাখাই ভালো। তা যদি সম্ভব না হয় তবে মৃদু শব্দের রিংটোন ব্যবহার করুন।
# অনেকে কাজের ফাঁকে বা কাজ করতে করতে গান শুনতে পছন্দ করেন। অফিসে মোবাইলে বা কম্পিউটারে লাউড স্পিকারে গান শুনবেন না। প্রয়োজনে হেডফোন ব্যবহার করুন। এমন হেডফোন ব্যবহার করুন যেটা কানে লাগালেও বাইরের শব্দ শুনতে পারা যায়। যাতে করে অফিসে কেউ ডাকলে আপনি শুনতে পান।
# অফিস বলে যে ডেস্কে বসে কেউ ব্যক্তিগত কাজ করতে পারে না তা কিন্তু নয়। আবার অফিসে অনেক ধরণের কনফিডেনশিয়াল কাজও আছে যা সবার সামনে করা যায় না। তাই অফিসে অন্য কারো রুমে বা ডেস্কের সামনে যাওয়ার আগে অব্যশই অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। বিনা অনুমতিতে কারো রুমে অথবা কেবিনে প্রবেশ করা উচিৎ নয়।
# বিনা প্রয়োজনে অফিসে ঘুরাঘুরি করা উচিৎ নয়। অফিসের কাজের ফাঁকে ২-৪ মিনিট গল্প সল্প করাই যায় তবে যেটা খেয়াল রাখতে হবে তা হল আপনার গল্পে যেন অন্য কারো সমস্যা না হয়। আর আপনি যার সাথে গল্প করতে যাচ্ছেন সে আসলে আপনার মতই ফ্রি আছে কিনা সেটা খুব ভাল করে খেয়াল করে নিন। হয়তো ভদ্রতার খাতিরে সে বলতে পারছে না তিনি ব্যস্ত। তার ব্যস্ততা আপনাকেই অনুধাবন করতে হবে।
শেষ কথা, একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে সব জায়গাতেই নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন আপনার কথায়, কাজের মাধ্যমেই আপনার শিক্ষার বহির্প্রকাশ ঘটে। পরিবেশ বুঝে কাজ করতে, বলতে হবে।