মো. আমিনুল ইসলাম শাহিন, উদ্যোক্তা ও লেখক, 28 Apr 2018 প্রতিষ্ঠানে কেমন কর্মী প্রয়োজন? কর্মী নির্বাচন একটি বিষয়ে মাঝে মাঝেই অনেকের মধ্যে দ্বি-মত দেখা যায়। বিষয়টি হলো- একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কেমন কর্মী প্রয়োজন? দক্ষ কর্মীবাহিনী নাকি বিশ্বস্ত কর্মীবাহিনী? এ বিষয়ে কোনটিকে আপনি অগ্রাধিকার দিবেন? কেনই বা অগ্রাধিকার দিবেন। একজন দক্ষ কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে এ বিষয়ে দ্বি-মত করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই দক্ষ কর্মীই যদি সৎ না হয়, তাহলে কি আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি বাধার সম্মুখীন হবে না? আবার একজন বিশ্বস্ত কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানকে হয়তো কোনো ক্ষতির সম্মুখীন করবে না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের যে অগ্রগতি; সেই অগ্রগতিতে যদি ভূমিকা রাখতে না পারে, তাহলে সেই কর্মী কি আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে একসময় বোঝা হয়ে যাবে না? বা আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির বাধা হিসেবে বিবেচিত হবে না? তাহলে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কেমন কর্মী বাছাই করবো বা অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দেবো? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আর মরুভূমিতে পানি খোঁজার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য আছে কি? মনে হয় নেই। কারণ এ প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। কেউ হয়তো বলবে, দক্ষ কর্মী আবার কেউ হয়তো বলবে বিশ্বস্ত কর্মী। আসলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজ যেমন ভিন্ন, ঠিক তেমনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা যার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়, তিনিও কিন্তু ভিন্ন। ফলে একেক জনের নেতৃত্ব প্রদানের গুণাবলী, নেতৃত্বের ধরন, চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একটি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সঠিক নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। জিনতত্ত্ববিদ এলান কিথ’র মতে, ‘নেতৃত্ব হলো মানুষের জন্য একটি পথ খুলে দেওয়া। যাতে তারা কোনো অসাধারণ ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে পারে।’ সহজভাবে যদি এ কথাটি বলি, তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনিই হলেন সঠিক নেতা; যিনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবেন, যেখানে একজন দক্ষ কর্মী চাইলেই অসৎ হতে পারবে না বা একজন বিশ্বস্ত কর্মী নিজে নিজেই পরিবেশগত কারণে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন এবং উভয়ই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবেন। নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন প্রচলিত আছে- একেক জন নেতার নেতৃত্বের ধরন একেক রকম হয়। যেমন- একনায়কত্ব, স্বৈরাচারী, অংশগ্রহণকারী, অবাধ-স্বাধীনতা প্রদানকারী ইত্যাদি। কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কী ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে, সেটা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর। তবে প্রতিষ্ঠানের কাজ যে ধরনেরই হোক না কেন কিছু বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানের নেতাকেই খেয়াল রাখতে হবে। আর এর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রতিষ্ঠানের সব কর্মীর মধ্যে এমন একটি দলীয় উদ্দীপনা তৈরি করা, যাতে সবাই সেই প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে মনে করে এবং দলীয় উদ্দীপনার মাঝে দক্ষ-অদক্ষ, সৎ-অসৎ সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতির জন্য কাজ করবে। দলের সব সদস্য একতার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই হবে। সদস্যদের নিজেদের অবদান রাখা, অন্যের কাছ থেকে শেখা এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকা অবশ্য প্রয়োজন। একটি সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা থাকতেই হবে। তাই উন্নত ক্রিয়াশীল দলের দশটি বৈশিষ্ট্য- অভিপ্রায়দলের অস্তিত্ব কেন আছে, সে বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে একটি গর্ববোধ থাকে এবং তারা দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে নিবেদিত। অগ্রাধিকার এরপর কী করতে হবে, তা কে করবেন এবং কোন সময়ের মধ্যে দলের লক্ষ্যে উপনীত হতে হবে তা সদস্যরা জানেন। ভূমিকাকাজ নিষ্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী, সদস্যরা তা জানেন এবং কখন আরও দক্ষ একজন সদস্যকে একটি বিশেষ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, সে সম্পর্কেও তারা অবগত। সিদ্ধান্ত কর্তৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সীমা সম্পর্কে স্পষ্ট বোধ থাকতে হবে। বিরোধ সমস্ত বিরোধের মোকাবিলা খোলাখুলিভাবে করা হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসদস্যরা মনে করেন, তাদের অভিনব ব্যক্তিত্বকে প্রশংসা করা হয় এবং তার সদ্ব্যবহার করা হয়। বিধি একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে দলীয় বিধি স্থির করা হয় এবং দলের প্রত্যেকের জন্য তা মান হিসেবে দেখা হয়। কার্যকারিতা সদস্যরা দলীয় বৈঠককে দক্ষ ও উত্পাদনশীল বলে মনে করেন এবং একত্রিত হওয়ার এই সময়টুকুর জন্য প্রতীক্ষা করেন। সাফল্য দল কখন সফল হয়েছে, তা সদস্যরা স্পষ্টভাবে জানেন এবং তা সবার সঙ্গে সমানভাবে ও গর্বের সঙ্গে ভাগ করে নেন। প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রদানের সুবিধা এবং দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং দলের সদস্যরা সেই সুবিধা নেন। এখন আমাদেরই ঠিক করতে হবে- কখন, কিভাবে, কী কৌশলে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব প্রদান করবো।