কাইয়ুম, এইচআর প্রফেশনাল, 28 Aug 2018 সেলফ ডেভলপমেন্ট কি, কেন প্রয়োজন এবং কোথায় কিভাবে করবো? The ways to self development সেলফ ডেভলপমেন্ট হচ্ছে নিজের ক্রমাগত উন্নয়ন সাধন করা। সেটা হতে পারে শারীরিক উন্নয়ন, মানসিক উন্নয়ন, জ্ঞান এর উন্নয়ন, পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, সামাজিক মর্যাদার উন্নয়ন, ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স এর উন্নয়ন এবং আরো অনেক কিছু। এখন জানা দরকার কিভাবে আমি করবো এসকল উন্নয়ন। প্রথমেই বলে রাখা ভালো সেলফ ডেভলপমেন্টের জন্য শুরুতেই গুরু ধরার কিছু নেই তবে মেন্টর হিসেবে কাওকে পেয়ে গেলে লুফে নিতে পারেন দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই। তবে আবারো বলছি মেন্টর না পেলে ভয় পেয়ে যাবার কোন কারণ নেই, নিজের যেহেতু উন্নয়ন সুতরাং নিজেই হয়ে যান নিজের মেন্টর আর ইন্টারনেটের বিশাল জগত তো আছেই। চলুন পেশাগত দক্ষতার কি কি উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা দিয়ে শুরু করি- প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি পারেন আর কি পারেননা। সে যত ছোট কিংবা বড় ব্যাপার হোক তালিকায় লিপিবদ্ধ করতে কার্পণ্য করার দরকার নেই। আপনি কথা বেশি বলতে পারেন সমস্যা নেই লিখে ফেলুন, আপনি পরিশ্রম কম করেতে পারেন তাও লিখে ফেলুন কিংবা আপনি কথায় কথায় হাসতে পারেন তাও লিখে ফেলুন আপনার পারা না পারার তালিকায়। তারপর ভাবতে শুরু করুন যা ভালো পারেন তাকে কি কাজে লাগানো যায় আর যা পারেননা টা কিভাবে আয়ত্তে আনা যায়। মনে রাখবেন ভাবনা যেন সারাজীবন ভাবনা হয়েই থেকে না যায় তা কাজে রূপান্তরিত করায় মননিবেশ করুন। এবার আসুন কিছু অবশ্য করনীয় ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করি যাতে আপনার মনোযোগ অবশ্যই দিতে হবে- ১। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন কিনা নিজেকে প্রশ্ন করুন। (শুদ্ধ উচ্চারণে প্রমিত ভাষায়।) ২। ইংরেজি ভাষায় আপনার দক্ষতা কতটুকু সেটা পরিমাপ করে ফেলুন আজই। ৩। কম্পিউটার কেবল এবং কেবল মাত্র গান শুনা বা মুভি দেখার কাজেই ব্যবহৃত হয় এই ধারণা থেকে বের হয়ে জানতে হবে এর আরো অনেক ব্যবহার আছে। ৪। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড দিয়ে ABCD লিখা ছাড়াও আরো অনেক কাজ করা যায় তার ব্যাপারে জানার চেষ্টা আজই শুরু করুন, কারণ আজ না হলে কাল কখনোই আসবেনা। ৫। মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে ছাত্র ছাত্রিদের রেজাল্ট আর যোগ বিয়োগ ছাড়াও আরো অনেক কিছু করা যায় এটাও জানার চেষ্টা আজ থেকেই শুরু করুন। (ভিলুকআপ, এইচলুকআপ, ইফ ফাংশান, পিভট টেবিল, ডাটা চার্ট সহ আরো অসংখ্য কিছু আছে যার সম্পর্কে জানলে এক্সেল কে নোভেল দেওয়ার জন্য আমরণ অনশন শুরু করে দিবেন এটা আমি বিশ্বাস রেখেই বলতে পারি।) ৬। ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক আর ইউটিউব নয়, ইন্টারনেটের জগতটা অনেক বড়। একে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসুন। (সিভি ফর্মেট খুঁজছেন গুগল করুন অসংখ্য ফরমেট পেয়ে যাবেন, ইন্টার্ভিউ টিপস নিতে চান খুজুন পেয়ে যাবেন, এক্সেল টিপস চান তাও পাবেন, নিজের উন্নয়নের টিপস চান তাও পাবেন শুধু আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি কি চাচ্ছেন।) ৭। মেডিটেশনটাকে আয়ত্তে নিতে পারেন নিজের ভিতরের রাগ, কষ্ট, অহংকার, হতাশা সহ আরো অনেক কিছুকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য, সত্যি এক অসাধারণ শক্তি এই মেডিটেশন। ৮। নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় সুন্দর করে তার প্রতি নজর দিন। (কথা নেই বলা নেই মেসেঞ্জারে গিয়ে চাকরি দেন চাকরি দেন বলে চিৎকার না করেও কিভাবে চাকরীর জন্য সাহায্য পাওয়া যায় সিনিয়রদের থেকে সেটা বোঝার চেষ্টা করুন।) ৯। নেটওয়ার্কিং করুন। ফেসবুকটা শুধু বিনোদনের জায়গা এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণে। বর্তমান সময়ে আপনার ঘরের ১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায় ফেসবুকে। তাই নেটওয়ার্কিং এর জন্য ফেসবুক হতে পারে এক অনন্য মাধ্যম। আপনার প্রফেশনাল ইন্টারেস্টের কাজে লাগান ফেসবুক ও আপনার পছন্দের পেশার লোকেদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করুন। ১০। আমি সব জানি এটিটুড ভুলে গিয়ে নতুন নতুন ব্যাপারে জানার আগ্রহ তৈরি করুন। সবাই সব কিছু জানবে না এটাই স্বাভাবিক। না জানাটা কোন পাপ না কিন্তু জানার সুযোগ পেয়েও জানার চেষ্টা না করাটা পাপ। আপনি যে কারো থেকেই নতুন কিছু শিখতে পারেন। সে আপনার থেকে বয়সে বা পদে ছোট হলেও কোন ক্ষতি নেই। ১১। ভালো ক্যারিয়ার গঠনের পথে পজেটিভ হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। নিজের ভিতরের নেগেটিভিটি থেকে বের হয়ে আসুন। ১২। মনে রাখবেন পৃথিবীতে জীবনের পরে সময়ের মত মূল্যবান কিছু নেই। তাই সময়ের সঠিক ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি অযথা সময় নষ্ট করছেন কিনা। ১৩। জগত প্রতিদিন পরিবর্তিত হচ্ছে, তার সাথে নিজেকে প্রতিদিন খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত করুন। ১৪। আমি পারবো না এবং আমাকে দিয়ে হবেনা এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রক্ত মাংসের যেকোনো মানুষ যা পারে সঠিক পথে চেষ্টা করলে তা আপনিও পারবেন। ১৫। হাসি দিয়ে কথা বলতে এবং পজেটিভ মন্তব্য করতে বা লিখতে শিখুন। চাকরি দিন, এটা না বলে বলতে শিখুন আমি আপনার কাছ থেকে কিছু শিখার জন্য আপনার মূল্যবান সময়ের কিছু সময় কি নিতে পারি। ১৬। পোশাক নির্বাচনে সচেতন হোন। পোশাক আপনার পছন্দকে প্রতিনিধিত্ব করে। ১৭। খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনুন আর প্রতিদিন হালকা কিছু শারীরিক ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম মানেই জিমে ভর্তি হতে হবে এমন নয়। ঘরেই সহজে করা যায় এমন ব্যায়াম ইউটিউব থেকে দেখে নিন। ১৮। তামাক বা অন্য যে কোন নেশাদ্রব্য ক্যারিয়ার গঠনের পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি শারীরিক ক্ষতি তো হচ্ছেই। এসব অভ্যাস থাকলে যত দ্রুত সম্ভব দূর করুন। ১৯। সব শেষে যেটা বলতে চাই সেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। কাইয়ুম | এইচআর প্রফেশনাল | [email protected]