alexa

Carrer tips

রেজুয়ার রহমান,

অফিস থেকে ছুটি কিভাবে নিবেন?

অফিস থেকে ছুটি কিভাবে নিবেন?
Taking Leave

আজকাল বেশির ভাগ চাকরিজীবী তাদের বছরের প্রাপ্য সবগুলো ছুটি খরচ করেন না। তার একটা বড় কারণ হল চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা। অনেকেই মনে করেন বেতনভুক্ত ছুটি বেশি কাটালে বস মনে করবেন আপনি দায়িত্ব এড়িয়ে চলছেন অথবা আপনি চাকরি করার যোগ্য না। যার ফলে হয়তো বস আপনাকে চাকরিতে রাখার ব্যাপারে নিরুতসাহিত হয়ে উঠতে পারেন। অনেকে ছুটির বিনিময়ে বাড়তি উপার্জনের জন্যও ছুটি কাটান না।

কিন্তু বাস্তবটা হল মানসিক, শারীরিক, পারিবারিক বিভিন্ন কারণে আমাদের সবারই ছুটির অনেক প্রয়োজন। আত্মীয় অসুস্থ থাকতে পারেন, তার চিকিৎসার জন্য; নিজের অসুস্থতা, বোনের বিয়ে অথবা নিজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য ছুটি কাটানো অত্যন্ত জরুরী। এবং আপনি চাইলেই কাজে অবহেলা না করেই ছুটি নিতে পারেন।

ছুটি নেয়ার প্রথম ধাপ হল সঠিক উপায়ে ছুটির আবেদন করা। অনেকে এই সঠিক উপায়টা না জেনে বসদের কাছে নিজের ভাবমূর্তি শুরুতেই নষ্ট করে ফেলেন।

নিয়ম অনুসরণ করুনঃ

নিজের ছুটির ক্যালেন্ডার সাজানোর আগে কোম্পানির ছুটি সংক্রান্ত নীতিমালা ভাল করে জেনে নিন। আপনার ছুটির আবেদন কোম্পানির নীতি নির্দেশিকা অনুসারে হচ্ছে কিনা সেটি সবার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
শুধু সারা বছর কতগুলো ছুটি পাবেন সেটা হিসেব করলেই চলবে না, ছুটি গুলো কবে এবং কি কারণে তাও বুঝে নিতে হবে। বাংলাদেশে ছুটির ব্যাপারে কয়েক ধরণের নিয়ম অনুসরণ করা হয়। অনেক কোম্পানি কর্মীরা ছুটি না কাটালে তার বিনিময়ে টাকা প্রদান করে। অনেক কোম্পানি ছুটি না কাটালে সেই ছুটি পরবর্তী বছরের ছুটির সাথে যোগ করে দেয়। আবার অনেকে বছর শেষে অবশিষ্ট সকল ছুটি কাটাতে বাধ্য করে। আবার অনেক কোম্পানি আপনি যদি ছুটি না কাটান তার বিনিময়ে কোন প্রকার সুবিধা প্রদান করে না। আপনার কোম্পানি কোন নিয়মটি অনুসরণ করে সেটা জানা খুব জরুরী। আপনি যদি কোম্পানিতে নতুন হন তবে কতদিন কাজ করার পর আপনি বেতনভুক্ত ছুটি নেয়ার অধিকার পাবেন সেটি জেনে নিন। অনেক সময় কোম্পানিতে বেশিদিন কাজ করা লোকেরা ছুটির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ভোগ করে।

আপনার ডিপার্টমেন্টে ছুটি ঠিক কিভাবে বণ্টন হয় সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন। অনেক অফিস কর্মীদেরকে সারা বছর জুরে ছুটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়। আবার অনেক অফিস বছরের কোন এক সময় টানা ৩ সপ্তাহের ছুটি এক সাথে কাটানোর সুযোগ দেয়। কোম্পানিতে লিখিত অলিখিত অনেক ধরণের নিয়ম রয়েছে। আপনার আবেদন মঞ্জুর হবে কি হবে না তা এসব নিয়মের উপর নির্ভর করে।

কখন ছুটি নিবেনঃ

পরবর্তী ধাপ হল নিজের মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে ছুটির সময় নির্বাচন করা। ভাল করে খেয়াল করুন অফিসে কোন বড় প্রজেক্ট বা অনুষ্ঠান চলছে কিনা যার কার্যক্রম আপনার ছুটির কারণে ব্যাহত হতে পারে। যদি এমন হয় তবে আপনার ছুটি নেয়াটা কিছুদিন এগিয়ে অথবা পিছিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনি অফিসে থাকতে পারেন।
ছুটি নেয়ার সময় সহকর্মীদের কথাও ভাবতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই একজন কর্মী অনুপস্থিত থাকলে দলের অন্যান্য কর্মীদের উপর কাজের চাপ বেড়ে যায়। যদি আপনার দলকে মাসের নির্দিষ্ট কোন সময় কাজের হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয় তবে মাসের ওই সময়টায় ছুটি নেয়া থেকে বিরত থাকা ভাল। এসময় ছুটি নিলে আপনার কাজটা অন্য কাউকে করতে হবে এবং সে এই বাড়তি কাজের জন্য প্রস্তুত না থাকতে পারে। ফলে আপনার কাজটা অসমাপ্ত রয়ে যাবে এবং আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

আগে থেকেই জানিয়ে রাখুনঃ

আপনি যখন ছুটি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এবং দিন তারিখ ঠিক করে ফেলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আপনার বসকে জানিয়ে দিন। আপনার বেতনভুক্ত ছুটি কাটানোর অধিকার আছে বলেই যে আপনি যখন তখন ছুটি নিতে পারবেন এটা ভাবা ঠিক না। আপনি আগে থেকেই জানিয়ে রাখলে আপনার অনুপস্থিতিতে অফিসের কাজ কিভাবে ম্যানেজ করা হবে সেটার প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। অফিস থেকে ছুটির অনুমতি পাবার আগে কখনই বাসের টিকেট বা হোটেলে বুকিং দিবেন না। কোন কারণে দিয়ে থাকলেও সেটাকে বসের সামনে অজুহাত হিসেবে উপস্থাপন করবেন না। এতে করে মনে হবে আপনি অফিসের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করেই নিজের পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছেন। আপনি যদি যথেষ্ট সময় আগে অফিসে জানিয়ে থাকেন তবে আপনার বস আপনাকে কোন অজুহাত দিয়ে অফিসে ধরে রাখার চেষ্টা করবে না।

বসের মেজাজ বুঝে ছুটির দরখাস্ত পেশ করুনঃ

আপনার ছুটির আবেদন মঞ্জুর হবে কি না সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে বসের মানসিক অবস্থা ও অফিসের আবহাওয়ার উপর। তাই আপনি আপনার আবদার কবে এবং কখন বসের সামনে উপস্থাপন করছেন সেটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পর পর দুইটা মিটিং করে আসার পর আপনার বসের যখন মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে কিংবা চলতি মাসে বিক্রয় ১০% কমে গেছে এমন একটা রিপোর্ট তার হাতে, তখন ছুটি চাওয়ার জন্য মোটেও ভাল সময় না। বসের মেজাজ বোঝার চেষ্টা করুন ও সুযোগ বুঝে একটা ভাল সময়ে ছুটির আবেদন করুন।

যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখুনঃ

অনেক সময় আপনার সকল কৌশল ঠিক থাকার পরেও ছুটি হয়তো মঞ্জুর না হতে পারে। হতে পারে অফিস নতুন একটা প্রোজেক্ট হাতে পেয়েছে যেটা সঠিক সময়ে সম্পন্ন করা জরুরী এবং তার জন্য আপনাকে অফিসে থাকতে হবে। হতে পারে আপনি ছুটির আবেদন করার আগেই আরো ২-৩ জন ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে গেছে। তাই যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ছুটি না পেয়ে অতিরিক্ত উচ্চবাচ্য করলে সেটা ভবিষ্যতে আপনার জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে না।